গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বেত্রাঘাতে আহত শিক্ষার্থী; স্বাভাবিক ব্যাপার বললেন প্রধান শিক্ষক

আজকের বাংলাদেশ রির্পোট:-
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মাঝিগাতি দশপল্লী এন কে উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার রায় বেত্রাঘাতে মাথায় আঘাত পেয়ে মারাত্মক আহত হয়েছে মেহেদী হাসান নামের ৮ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই ছাত্র। বিষয়টিকে স্বাভাবিক ব্যাপার বলে উড়িয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষক প্রসাদ কুমার মৃধা। বিষয়টি নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবগক অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে ঘটনার পরদিন থেকে ছুটি না নিয়েই স্কুলে আসছেন না ওই শিক্ষক প্রদীপ কুমার রায়।
আহত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, ক্লাসে দুই একজন কথা বলছলি। হঠাৎ করে পবিত্র স্যার এসে সকলকে বেত দিয়ে গায়ের জোরে এলোপাতাড়িভাবে পিটাতে থাকেন। একটি বেতের বাড়ি আমার মাথায় এসে স্বজোরে লাগলে আমি সাথে সাথে ঘুরে পড়ে যাই। আমার মাথায় পানি দিতে চাইলে স্যার বলেন, পানি দিতে হবে না। ও ভাব ধরেছে।
ওই শিক্ষার্থীর মা রোকসানা বেগম জানান, ঘটনার দিন শনিবার দুপুর ১টার দিকে স্কুল থেকে ফোন করে আমার ছেলের অসুস্থ্যতার খবর জানিয়ে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে যেতে বলেন প্রধান শিক্ষক। আমি দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি আমার ছেলেকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। সে ব্যাথায় কাতর হয়ে শুয়ে রয়েছে। রবিবার প্রধান শিক্ষক হাসপাতালে এসে আমার হাতে একটি ছাড়পত্র ধরিয়ে দিয়ে বলেন, হাসপাতালে আর থাকা লাগবে না। ডাক্তার নানা ধরণের ঔষধ লিখলেও হেড স্যার বলেন, এত দামী ঔষধ খাওয়ালে আপনার ছেলের ক্ষতি হবে। পরে তিনি এক পাতা প্যারাসিটামল কিনে দিয়ে জোর করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। সন্ধ্যায় আমার ছেলের মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসি। তিনি ১০ দিনের ঔষধ লিখে দিয়ে বলেন, এতে ব্যাথা না কমলে খুলনা অথবা ঢাকা নিয়ে যেতে হবে। সোমবার সকালে ছেলের মাথা ব্যাথা আরো বেড়ে গেলে পুনরায় তাকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে ডাক্তার ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানোর পরামর্শ দেন। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির উদ্দেশ্যে বিকেলেই আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই।
অভিযুক্তি সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার রায় স্কুলে অনুপস্থিত ও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসাদ কুমার মৃধা বলেন, বিষয়টি খুব স্বাভাবিক। ঘটনার পর আমরা মেহেদীকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। স্কুলে অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক অসুস্থ থাকার কারণে মৌখিক ছুটিতে রয়েছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম মোর্শেদ বলেন, ছাত্রকে পিটানোর ব্যাপারটি প্রধান শিক্ষক আমাকে অফিসিয়ালী জানান নি। অন্য মাধ্যমে ঘটনাটি শুনে আমি নিজেই প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়েছি। বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়ে বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চত হবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাদিকুর রহমান খান বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বাবা আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।