মৃত তিস্তায় জেগে উঠেছে ছোটবড় চর

আজকের বাংলাদেশ রিপোর্ট:
আগস্টের মধ্যভাগেই পানিশূন্য হয়ে পড়ছে তিস্তা। নদীর বুকে জেগে উঠছে ছোটবড় চর। ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণের কারণে তিস্তা এখন স্রোতহীন মরা নদী, কোথাও হাঁটুজল। পানিশূন্য হয়ে পড়ায় তিস্তা অববাহিকার জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে।
বন্ধ হয়ে গেছে ছোটবড় খেয়াঘাটও। তিস্তা নদীর ওপর ভর করে জীবিকা নির্বাহকারী নৌকার মাঝি ও মৎস্যজীবীরা চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে তিস্তা। পরে এটি লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে।
৩১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।
গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে ভারত এককভাবে তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরই বাংলাদেশে পানি দেয় ভারত। প্রয়োজন ছাড়াই বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে বন্যার পানিতে ডোবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা দাবি করলেও তা পূরণ হয়নি আজও।
কথা হয় তিস্তাপারের কৃষক শরিফুল আলম, আফজাল মিয়া ও খালেকের সঙ্গে। তারা জানান, বর্ষাকালে প্রচুর পানি ছেড়ে দেয়ায় সৃষ্ট বন্যায় ফসলহানিসহ ঘরবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়ে। আবার শুষ্ক মৌসুমে ফসল রক্ষায় পানির প্রয়োজন হলেও পানি পাওয়া যায় না। এবার মধ্য আগস্টেই পানিশূন্য তিস্তাপারের চরাঞ্চলে চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে তিস্তা নদী কৃষকের জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে আবার।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, বেশ কিছুদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আগস্টেই কমেছে তিস্তার পানি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকাল ধরা হয়। সেই অনুযায়ী এ অঞ্চলে বা ভারতের সিকিমে বৃষ্টিপাত হলে তিস্তায় পানি বাড়তে পারে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে সেচ প্রকল্প সচল রাখা সমস্যা হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
পানির অভাবে দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিস্তা নদীতে দিনভর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলে ও খেয়াঘাটের মাঝিরা বর্তমানে কর্মহীন হতে বসেছে। পানির অভাবে তিস্তাপারের মানুষ জীবন-জীবিকার খোঁজে অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছে।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদেরও এখন দেখা মেলে না তিস্তার অববাহিকায়। তিস্তার ওপর নির্মিত তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু ও গঙ্গাচওড়া শেখ হাসিনা সেতু দাঁড়িয়ে রয়েছে এখন বালুচরের ওপর। ব্রিজ থাকলেও হেঁটেই পার হচ্ছে অনেকেই। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরের বালুকণায় ভুট্টা, আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদের প্রস্তুতি নিলেও পানিশূন্য তিস্তায় সেচ নিয়ে চিন্তিত কৃষক।