ইয়াবার জন্য বন্ধুকে খুন, সাড়ে ৪ মাস পর রহস্য উদঘাটন

আজকের বাংলাদেশ রিপোর্ট:
ইমরান ও তাসিন দুজনেই বন্ধু। গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে (৩১ ডিসেম্বর রাতে) বন্ধু তাসিনের কাছে ২০ পিস ইয়াবা রাখতে দিয়েছিল ইমরান। পরে চাইতে গেলে ২০ পিসের জায়গায় ৫ পিস দিলে তা নিয়ে বিরোধ হয় দুই বন্ধুর মধ্যে। তখনই তাসিনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে ইমরান। পরিকল্পনা মতে গত ৩ মে রূপগঞ্জের পূর্বাচলের লেকে গোসল করার কথা বলে অন্য দুই বন্ধু শাওন ও তাহেরকে সাথে নিয়ে তাসিনের শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ইমরান। হত্যার পর লাশ ফেলে দেয় লেকের পানিতে। এই ঘটনার সাড়ে ৪ মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
নিহত যুবক তাসিন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাখরকান্দি এলাকার মাসুদ মাতবরের ছেলে। তারা বর্তমানে রাজধানীর খিলগাও তিলপাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন এবং নিহত তাসিন খিলগাঁও তালতলা এলাকায় একটি কাপড়ের দোকানে চাকুরি করতো। গত ২ মে তাসিন বাড়ী থেকে বের হয়। এরপর তাকে আর খোঁজে পাওয়া যায়নি।
ঘটনাটি প্রায় অপরাধ কেন্দ্রীক ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’র মতো। গত মে মাসে পূর্বাচলের লেক থেকে অজ্ঞাত এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাকি ঘটনা জানান ভোলাব পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (এসআই) শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, গত ৩ মে উপজেলার পূর্বাচলের ১৯ নং সেক্টরের রঘুরামপুর ঝিলে ১৭ বছর বয়সী এক যুবকের মৃতদেহ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পাশাপাশি পরিচয় শনাক্তের যাবতীয় করণীয় সম্পন্ন করেন। কিন্ত লাশ উদ্ধারের ৪ দিনেও পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মুসলিম মৃতদেহের সুবাদে পুলিশ নিজ উদ্যোগে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কালনী সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করেন। এদিকে পরিচয় শনাক্তে লাশ উদ্ধারের ছবি এসআই শফিকুল তার ফেইসবুক ওয়ালে পোষ্ট করেন। ঘটনার ৪ মাস পর চলতি সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে শেয়ার করা সেই ছবি চোখে পড়ে নিহতের ছোট ভাই তৌহিদুল ইসলাম রবিনের। পরে নিহতের মা হালিমা বেগম ছেলের পোশাক আর লাশের ছবি দেখে নিশ্চিত হন যে এটা তার নিখোঁজ ছেলে তাসিন (১৭)। গত সপ্তাহে তাসিনের মা ভোলাব ফাঁড়িতে এসে জানান উদ্ধার হওয়া লাশটি তার ছেলের।
এসআই শফিকুল জানান, পুলিশ নিহতের পরিবারের কাছ থেকে তাসিনের ঘনিষ্ট কয়েকজন বন্ধুদের নাম সংগ্রহ করে গত সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে খিলগাও তিলপাড়া এলাকার মান্নান মিয়ার ছেলে সিএনজি চালক ইমরানকে আটক করে।
তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২ মে তারা ৯ বন্ধু পূর্বাচলের ১৯ নং সেক্টরের রঘুরামপুর এলাকায় ঘুরতে এসে ঝিলে গোসলে নামে। এ সময় তাসিন সাতার না জানায় ডুবে মারা যায়। তার কথা সন্দেহজনক হওয়ায় তার দেয়া তথ্যমতে পুলিশ শাওন, আব্বাস ও শামীম নামে আরো ৩ জনকে আটক করে। তারাও পুলিশকে একই ধরনের জবানবন্দি প্রদান করেন। কিন্তু মঙ্গলবার আসা ময়নাতদন্তে চুড়ান্ত প্রতিবেদনে লাশের পেটে পানির আলামত না থাকায় পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে এক পর্যায়ে এক এক করে প্রত্যেকে স্বীকার করে পূর্বশত্রুতার জের ধরে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকেই তাসিনকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে ইমরান। অন্যান্যাদের যোগসাজসে গত ২ মে পূর্বাচলে এনে তাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ঝিলের পানিতে ফেলে রেখে যায়। আটক ৪ জনই বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড মাহমুদুল মোহসিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত ইয়াবাকে কেন্দ্র করেই ইমরান ও তাসিনের মধ্যে বিরোধ হয়। থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিশ পিস ইয়াবা রাখতে দিলেও পরে ৫ পিস ফেরত দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাসিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে ইমরান। পরে দুই বন্ধু তাহের ও শাওনকে নিয়ে হত্যা করে তাসিনকে। এ ঘটনায় ইমরান ও শাওনকে গ্রেফতার করা হলেও তাহের এখনও পলাতক রয়েছে। তবে ওইদিন বাকি বন্ধুরা হত্যার বিষয়টি জানতো না। ইমরান, শাওন ও তাহের; তাসিনকে নিয়ে আলাদা সিএনজিতে পূর্বাচল আসে। পরে পরিকল্পনামাফিক তাকে হত্যা করে।’