সোনার বার কেনার টাকার জন্য সোনারগাঁয়ে ইমামকে খুন

আজকের বাংলাদেশ রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেছেন, ‘সোনার বার কেনার টাকা ফেরত চাওয়ায় সোনারগাঁয়ের মসজিদের ইমাম দিদারুলকে হত্যা করা হয়েছে। আর সেই ঘটনার মোড় ঘোরানোর লক্ষ্যে তাকে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য অ্যাখ্যা দিতে চেয়েছিল খুনি ওহিদুর জামান।
বুধবার (২৮ আগস্ট) ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের তদন্তে আসামিকে গ্রেপ্তারের পর বেলা সাড়ে তিনটায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
এসপি হারুন জানান, ‘ঘটনাস্থলে একটি চিরকুট পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল, ‘ইমাম দিদারুল ইসলাম হিযবুত তাওহীদের সদস্য। সে আমাদের দল থেকে অস্ত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে এসেছে। তাই আমরা তাকে মেরে ফেলেছি। আসলে খুনি পুলিশকে বিভ্রান্ত করে ঘটনাটি কোন জঙ্গি সংগঠন ঘটিয়েছে এমনটা প্রমাণ করতে ওই চিরকুট লিখেছিল। পরে তদন্তে নেমে এই ঘটনার একমাত্র আসামি ওহিদুর জামানকে মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।’
ব্রিফিংয়ে এসপি জানান, ‘ইমাম দিদারুল ইসলামের কাছ থেকে সোনার বার কেনার কথা বলে কয়েক দফায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয় ঘাতক ওহিদুর জামান (২৮)। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চেয়ে চাপ দিলে ঘাতক ওহিদুর দিদারুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সেই পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার আগের রাতে দিদারুলের সঙ্গে মসজিদে দেখা করে এবং বলে, আগামীকাল (২১ আগস্ট) রাতে এশার নামাজের পর তাকে তার টাকা ফেরত দেবে। হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘাতক ওহিদুর শিবচরের পাঁচচর এলাকা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি, সোনারগাঁ মুড়াপাড়া থেকে ঘুমের ঔষধ ও কোকাকোলার বোতল কিনে রাখে। পরে হত্যার দিন প্রথমে কোকাকোলার সঙ্গে ঘুমের ঔষধ মিলিয়ে ইমাম দিদারুলকে অচেতন করে। পরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, চাপাতি দিয়ে তার গলা কেটে তাকে হত্যা করে।
তিনি আরো জানান, ‘পরবর্তীতে নিহতের খাতায় ‘হিযবুল তাওহিদের সদস্য, সে আমাদের দল থেকে অস্ত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে এসছে তাই আমরা তাকে মেরে ফেলেছি’ এমন আরো কিছু কথা লিখে রাখে। এবং মসজিদের ওজু খানায় গোসল করে রক্ত মাখা লুঙ্গি পাশর্^স্থ কচুরি পানায় ফেলে রেখে ঢাকা মিরপুর হয়ে মাদারীপুর চলে যায়। মূলত ঘাতক ওহিদুর পাওনা টাকা ফেরত না দেয়ার জন্যই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যাকান্ডটি ঘটায়। উক্ত হত্যাকান্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাওহিদের নাম ব্যবহার করে।’
গত ২২ আগস্ট সোনারগাঁ মল্লিকপাড়া গ্রামের নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল জামে মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত দিদারুল খুলনার তেরখাদা থানার রাজাপুর এলাকার আফতাব ফরাজির ছেলে। এর আগে গত ২৬ জুলাই তিনি মল্লিকপাড়া গ্রামের ওই মসজিদটিতে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান।
হত্যাকান্ডের পর জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) নির্দেশে ক্লু-লেস এ মামলার তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আসামিকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিবাগত রাতে মাদারীপুরের শিবচর থানা এলাকায় থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাকৃতের নাম ওহিদুর রহমান (৩১)। সে খুলনার নড়াইলের কলাবাড়ীয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (টুকু) শেখের ছেলে। ওহিদুর রহমান নিজেও মাদারীপুরের শিবচর এলাকার স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতো।